স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই। স্থানীয় সরকার আগে প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেমন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এরা কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী হয়নি। এটা ধারাবাহিক ভাবে ছিলো তাই সংবিধান এটাকে গ্রহন করে নিয়েছে। তারপর আরেকটি হচ্ছে পৌরসভা এবং জেলা পরিষদ । এগুলো ধারাবাহিক ভাবে ছিলো পরে এগুলোকে গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তন হয়েছে। আগে ছিলো এক ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থা পরে স্বাধীনতার পরে সেটাকে সার্বজনীন করা হয়েছে।
গত ২৯ নভেম্বর শুক্রবার সকালে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল কুমিল্লার জমিনের ১৫৬তম লাইভ টক-শোতে তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিক,সংগঠক ও টক-শো উপস্থাপক শাহাজাদা এমরানের সঞ্চলনায় স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার পদ্ধতি নিয়ে এ টক-শো অনুষ্ঠিত হয়।
বিশিষ্ট পল্লী উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী জেলা পরিষদ হয়নি আর উপজেলা পরিষদ হয়েছে ১৯৮৩ সালে। জেলা পরিষদে বিল্ডিং আছে , প্রশাসক আছে, কিন্তু পরিষদ গড়তে হবে। সেই পরিষদকে নির্বাচিত হতে হবে। কারণ নির্বাচনের কথা সংবিধানে বলা আছে। জেলা পরিষদ গঠিত হয়েছে একটি বিচ্ছিন্ন আইনে। যেখানে নির্বাচন হয়নি। সাংবিধানিক বিধান নাই। কিন্ত সংবিধানে নির্বাচনের কথা বলা আছে। তারা যে নির্বাচন দিয়েছে এ নির্বাচন না। আর উপজেলা পরিষদ এরশাদের আমলে করা হয়েছে যেখানে শুধু একজন চেয়ারম্যান থাকবে পরিষদে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকে মেম্বার করা হয়েছে উপজেলা পরিষদে। আইনে বলা হয়েছে তারা মেম্বার হয়ে যাবে তাই তারা মেম্বার হয়ে গেছে।
উপজেলার পরিষদের আলাদা বরাদ্দ আছে যা দিয়ে তারা উপজেলাটাকে সুন্দর করে সাজাবে। কিন্ত তারা সেটা না করে সেই বরাদ্দ ইউনিয়ন ভিত্তিক ভাগ করে দেয় । এটাতো কোন সিস্টেম হলো না। উপজেলা অনেক বড় একটি প্রতিষ্ঠান । তাদের অনেক গুলো বিভাগ আছে। কিন্ত তারা সেখানে কিছুই করতে পারছে না।
গত সরকার জেলা পরিষদকে বয়স্ক নেতাকর্মীদের পূর্নবাসন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। পরবর্তীতে এটা হয়ে গেছে পরোক্ষ নির্বাচন। জেলা পরিষদ কিন্ত বড় একটি প্রতিষ্ঠান । জেলা বোর্ড, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল এগুলো কিন্তু জেলা পরিষদের দায়িত্ব ছিলো। কিন্ত তারা সেগুলোর খরবও রাখছে না। জেলা পরিষদের সাথে যে সকল প্রতিষ্ঠান জড়িত, দেখা গেছে জেলা পরিষদের তাদের সাথে কোন সম্পর্কই নেই। তাই সংস্কার কমিশন চাচ্ছে তাদের যে দায়িত্ব সেগুলো যেন সঠিক ভাবে পালন করে এবং আমরা একটা পরিবর্তন চাই। এছাড়াও আরো অনেক বিষয় রয়েছে আমরা কমিশনকে বলবো সে গুলো সংস্কার করে জেলা পরিষদকে নতুন ভাবে সাজানো জন্য।
শুধু জেলা পরিষদ নয়, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের সকল কিছুর পরিবর্তন হবে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হবে। এই পরিবর্তনের জন্যই তো বিপ্লব হয়েছে। সেই বিপ্লবকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে হাবে। গত ১৫ বছরে নির্বাচনের ব্যবস্থাকে একেবারে ধ্বংস করে ফেলেছে। পরিষদ গুলোতে কাউন্সিল গঠন করতে হবে। কাউন্সিলরা সদস্য নির্বাচন করবে । সেখানে নারী পুরুষ সবাই অংশ গ্রহণ করতে পারবে। কাউন্সিলর না থাকায় আমরা সকল দায়িত্ব চেয়ারম্যানকে দিয়ে রেখেছি। যেটা তার কাজ সেটাও সে করে আবার যেটা তার কাজ না সেটাও চেয়ারম্যান করে। দোষ তো আমাদের, আমরা কেন সেই কাজটি করবো। আমরা বরাদ্দ আসলে সেটা সমান ভাবে সবাই ভাগ করে নেই। কিন্ত সেটা আমরা কেন করবো । মূল কাজটা তো করবে কাউন্সিলররা। তারা কাজ দিবে সেখানে মহিলা সদস্যরা প্রজেক্ট পাবে। আমাদের পরিষদে অনেক মহিলা সদস্য আছে যারা কোন কিছুই বুঝে না। তাদেরকে সদস্য বানিয়েছে কারা আমরাই বানিয়েছি। এখন কাউন্সিলর গঠন করে যদি সে কাজটা কাউন্সিলরার মাধ্যমে হয় তাহলে সেটা আর সমস্যা হবে না।বর্তমানে সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা মনে করে উপজেলায় কাজ আসবে সেখান থেকে আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।
এখন আমরা একটি সিস্টেম দাঁর করাবো জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন এ তিনটা একটি সিস্টেম। আর পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন একটি সিস্টেম। একজন প্রধানমন্ত্রী করতে হবে তার লোকাল গর্ভমেন্ট এবং সেন্টাল গর্ভমেন্টের মধ্যে সব ভেঙ্গে নতুন করে গঠন করতে হবে। উপজেলা এবং পৌরসভার সম্পদ সমান। এগুলোর মধ্যে যার যে কাজ সে সেই কাজই করতে হবে। এ সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। সব গুলোকে একটা আইনের মধ্যে আনতে হবে।
আমাদের সরকার হচ্ছে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার। সংসদ সদস্যরা স্থানীয় নির্বাচনে একটি প্রভাব ফেলে। এখন আমরা যদি এমন করি লোকাল গর্ভমেন্টে সকল চেয়ারম্যান নির্বাচন করবে জেলা পরিষদ এবং সারা পৌরসভার নির্বাচন করবে সিটি কর্পোরেশন । এমন একটা পরিবর্তেন আলোচনা চলছে। কাউন্সিলররা তাদের যে দায়িত্ব সেটাও তারা সঠিক ভাবে পালন করতে পারছে না। চেয়ারম্যনেদের সামনে গিয়ে তারা কথা বলতে পারছে না।
এ গুলো পরিবর্তন করতে হবে। চেয়ারম্যান মেম্বারদের মধ্যে দূরত্ব কমাতে হবে। তাদেরকে পার্লামেন্টের মত একটি সিস্টেমে আনতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদে আগে মেম্বারা নির্বাচিত হবে । তারপর তারা সবাই মিলে তাদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। বিপ্লব যেহেতু পরিবর্তনের জন্য হয়েছে সেই পরিবর্তনের জন্য আমরা কাজ করছি। আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ দেশের মানুষকে উপহার দেবো ইনশাআল্লাহ।