শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবারের বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়া গোমতী নদীর বুড়বুড়িয়া বাধঁ। পাউবোর তথ্য মতে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পুরোপুরি কাজ শেষ হয়ে যাবে। স্থানীয়রা বলছেন এখনো পর্যন্ত মনে হচ্ছে কাজ ঠিক ভাবে চলছে। তবে বাঁধ নির্মাণের পর মাটি যেন সরে না যায় এই ব্যবস্থা করতে হবে।
এবারের নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে যেসব এলাকায় নদীর বাঁধ ভাঙার উপদ্রব হয়েছিল। সেসব এলাকার বাঁধ গুলো ভালোভাবে মেরামত করা না হলে আগামী বর্ষায় আবারো নদীর বাঁধ ভাঙার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান গোমতী পাড়ের বাসিন্দারা।
গত ২২ আগষ্ট কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলা ষোলনল ইউনিয়ন বুড়বুড়িয়া এলাকা দিয়ে গোমতী নদীর বাধ ভেঙ্গে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয় । পানি বন্দি হয়ে পড়েছিল কয়েক লাখ মানুষ। অবকাঠামো, কৃষি, মৎস্য সহ বিভিন্ন খাতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে শতকোটি টাকার উপরে।
পাউবোর তথ্য অনুসারে জানা যায়, গত ৭২ বছরে এ নদীর বাঁধ ২৯ বার ভেঙেছে। তবে প্রতি বারই বাঁধ ভেঙেছে গভীর রাতে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও ঠেকানো যাচ্ছে না ভাঙন। এভাবে বাঁধ ভাঙার কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহের হাজার হাজার কোটি টাকার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাই এ নদীকে ‘কুমিল্লার দুঃখ’ বলা হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে নদী নিয়ে গবেষণা করা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দাবি-বাঁধ নির্মাণে ডিজাইনে ত্রুটি, তদারকি না থাকা ও দুর্নীতিসহ নানা কারণে টেকসই বাঁধ নির্মাণ হয় না, তাই বর্ষায় বাঁধ ভেঙে যায়। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ বাঁধ মেরামতে চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল অর্থবরাদ্দ ও তদারকিতে জনবলসংকটকে দায়ী করেছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, গোমতী নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চলের ডুম্বর এলাকায়। নদীটি আঁকাবাঁকা পথে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার কটক বাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবীদ্বার, মুরাদনগর, তিতাসের বুকচিরে প্রবাহিত হয়ে দাউদকান্দি উপজেলার শাপটা নামক স্থানে এসে মেঘনা নদীতে পড়েছে। বাংলাদেশ অংশে এ নদীর মোট দৈর্ঘ্য ১৩৫ কিলোমিটার। বর্ষায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদীসংশ্লিষ্ট এলাকায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয় এবং নদীর দুই তীরের বাঁধ হুমকির মুখে পড়ে। এ নদীর পানির প্রবাহ মাত্রা ১০০ থেকে ২০ হাজার কিউসেক পর্যন্ত ওঠানামা করে ।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চৌধুরী ট্রেডার্স এর ম্যানেজার জিল্লুর রহমান বলেন, কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পুরোপুরি কাজ শেষ করতে পারব। ৫৫ ফুট গভীর থেকে বাঁধ নির্মাণের কাজ করতে হয়েছে। যার জন্য এত সময় নিচ্ছে। মাটি দেওয়ার সাথে সাথে রোলার দিয়ে চাপ দেয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খাঁন মোহাম্মদ অলিউজ্জামান বলেন, বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। আমরা বাঁধের কাজ সবসময় পর্যবেক্ষণ করছি । আশা করছি জানুয়ারি মাসের আগেই বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে যাবে।