বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, মঈন ও ফখরুদ্দীনের দুই বছর ও আওয়ামী স্বৈরাচারের সাড়ে পনেরো বছর এই সাড়ে সতেরো বছর জাতির জন্য শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি ছিল। মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারেনি। আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় বসার এক মাসের মাথায় বিডিআর বিদ্রোহে ঢাকার পিলখানায় ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারকে হত্যা করেছিল। নির্মম ভাবে হত্যা করার পর লাশ গুলো ড্রেনে ফেলে দিল । রাতের আঁধারে কিছু লাশ গুম করে ফেলল । দুইটি তদন্ত কমিশনের কাছ থেকে জনগন কিছুই জানতে পারেনি। সেদিনকার প্রধানমন্ত্রী বললেন আমি দেখছি কি করা যায়। কিন্তু দেখতে দেখতে সব শেষ হয়ে গেল।
আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনার আদোপ্রান্ত খুঁজে বের করতে হবে । কারণ এই দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করা হয়েছিল ।এর পরের বছর তারা আঘাত করেছে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় দল জামায়াতে ইসলামের উপর । ষড়যন্ত্র করে জামায়াত ইসলামের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে । যারা দেশপ্রেমের কথা বলেছে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার তাদের বেশি আঘাত করেছে । আঘাত দিয়েছে আলেম ওলামাদের উপর। আঘাত দিয়েছে সাংবাদিকদের ওপর । তারা হত্যার মিশন নিয়ে নেমেছিল । ২৪ এর গণহত্যার এরা নায়ক নায়িকা । এদের প্রত্যেকের বিচার চাই । তিনি আজ শুক্রবার সকালে কুমিল্লা টাউনহল মাঠে কুমিল্লা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন।
আমীরে জামায়াত আরো বলেন, যদি বিচার করা না হয়, তাহলে সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বেড়ে যাবে । আমরা কি আর বাংলাদেশে সন্ত্রাস দেখতে চাই? আমরা যদি বাংলাদেশে আর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দেখতে না চাই তাহলে অবশ্যই বিচার করতে হবে ।
জুলাই আগস্ট এর যুদ্ধে সকল মিডিয়াদেরকে কণ্ঠরোধ করে রাখা হয়েছিল। দুই একটি মিডিয়া যারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চেয়েছিল তাদেরকেও দমিয়ে রাখা হয়েছিল । কিন্তু বিদেশ থেকে মিডিয়া যুদ্ধারা সমানতালে যুদ্ধ করেছে। কুমিল্লার সন্তান ফেইস দ্যা পিপলের সাইফুর রহমান সাগর গত ১৫ বছর এই সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশে বসে যুদ্ধ করেছেন ।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িকতার দেশ নয় । এই দেশে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ আমরা মিলেমিশে বসবাস করছি । আমরা বাংলাদেশে কোন মেজরিটি এবং মাইনরিটি মানি না । বাংলাদেশে যারা জন্মগ্রহণ করেছে তারা সবাই বাংলাদেশি । মাইনরিটি শব্দ ব্যবহার করে একটি গুষ্টি দেশের বাইরে থেকে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চায় । এখন তারা এগুলো বুঝতে পেরেছেন এজন্য তারাও এখন সোচ্চার হয়েছেন । ভারতের হলুদ মিডিয়া আমাদের দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে । তখন জগন্নাথ হল থেকে হিন্দু ছেলেমেয়েরা হলুদ মিডিয়ার বিরুদ্ধে মিছিল করেছে । তাদের জন্য লাল গোলাপের শুভেচ্ছা তারা প্রমাণ করেছে এই দেশটা আমাদের সবার ।
ভারতের কোন আভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমরা হস্তক্ষেপ করিনি । ভারত বলে আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অভাব । কিছুদিন আগে চরমপন্থী একটি সংগঠন চট্টগ্রামে একজন আইনজীবীকে হত্যা করেছিল । বাংলাদেশের মানুষ বলেছে যারা আইনজীবীকে হত্যা করেছে তাদের বিচার হতে হবে । আমরা আইন হাতে তুলে নেব না
তিনি বলেন, আমরা কোন আগ্রাসন সহ্য করব না । বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমি আমরা কাউকে ছেড়ে দেবো না । আমরা জীবন দেব তবু বাংলাদেশের আধা ইঞ্চি জমি ছেড়ে দেবো না ।জনগণকে বোকা ভাববার কোন সুযোগ নেই । আমাদের জনগণের উপর সম্পূর্ণ আস্থা আছে । জনগণ বিচার করবে অতীত কার কেমন ছিল । অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ চিন্তা করে জনগণ যে সিদ্ধান্ত নিবে , আমরা সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি । সিদ্ধান্ত আসবে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আর এ নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য । এখানে কোন পেশিশক্তি বা টাকার খেলা চলবে না ।
সরকারকে বলব সংস্কারের গতি বাড়ান । সংস্কারের গতি বাড়িয়ে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে দ্রুত নির্বাচন দিন । আপনাদের জাতীয় এজেন্ডা হল দেশের মানুষকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া । তার জন্য যত সংস্কার প্রয়োজন সবই আপনারা করবেন ।
তিনি কুমিল্লাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের দুটি দাবি। একটা বিমানবন্দর ও কুমিল্লা বিভাগ। কারন কুমিল্লা অনেক গুলো জেলার সাথে সম্পৃক্ত। আপনারা বিভাগ পাইলেন না আপনাদের কপালের দোষ । আপনাদের জেলার নাম কুমিল্লা । কুমিল্লা জেলা তো আমাজন জঙ্গল থেকে আসে নাই । এটা বাংলাদেশের অংশ । মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ও ২৪ এর যুদ্ধে কুমিল্লার ভূমিকা ছিল ।
আপনি একটি জেলাকে হিংসা করে বিভাগ দিবেন না। এটা হতে পারেন না । আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না । বাংলাদেশের যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন তাকে বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চির জমিকে সম্মান করতে হবে । এটা একটা জুলুম এটা একটা এলাকার বিরুদ্ধে জুলুম করা হয়েছে । আমি বর্তমান সরকারকে বলবো সব কিছু রেডি আছে কুমিল্লাবাসীকে কুমিল্লা বিভাগ উপহার দেন ।
আমরা এমন একটা বাংলাদেশ গঠন করতে চাই যেখানে কোন বৈষম্য থাকবে না ।
মিডিয়াকে বলা হয় জাতির দর্পণ। সাংবাদিকরা হল জাতির বিবেক । গত ১৭ বছর সাংবাদিকদের কাগজ ধরিয়ে দেওয়া হতো কি পড়তে হবে। এখন আর সেটি নেই। আপনারা বিবেক দিয়ে লিখবেন আবেগ দিয়ে নয় । আমরা কোন ভুল করলে আমাদের ধরিয়ে দিবেন গঠনমূলক সমালোচনা করবেন।
কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াম ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ আব্দুর রব, সাবেক চাকসু ভিপি ও কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, কুমিল্লা মহানগরীর নায়েবে আমির মু.মুছলেহ উদ্দিন ও একেএম এমদাদুল হক মামুনসহ জামায়াত এবং ছাত্র শিবিরের নেতারা।