‘পবিত্র কোরআনের মোজিজা : মাত্র পাঁচ মাসেই কোরআনে হাফেজ ও প্রসঙ্গ কথা’ বিষয়ক টক শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত ৮ টায় কুমিল্লা আল নূর হসপিটাল, মিশন হাসপাতাল প্রা. লি. ও কুমিল্লা হরমোন সেন্টার ও জেনারেল হাসপাতালের সৌজন্যে দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল কুমিল্লার জমিনের যৌথ উদ্যোগে ১৬১ তম পর্বের এ টক শো অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক, সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক শাহাজাদা এমরানের সঞ্চালনায় টকশো তে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিসবাহ, উম্মে সালমা( রা.) মহিলা মাদ্রাসা,রেসকোর্স, কুমিল্লার অধ্যক্ষ মাওলানা শাকের হোসেন শরীফ ও ৫ মাসে হওয়া কুরআনে হাফেজা হালিমাতুস সাদিয়া লাবিবা।
এসময় টক-শো তে ৫ মাসে হওয়া কুরআনে হাফেজা হালিমাতুস সাদিয়া লাবিবা’র হাফেজা হওয়ার পুরো যাত্রা ও পবিত্র কুরআনের মুজেজা ও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উঠে এসেছে।
আলোচনার এক পর্যায়ে মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিসবাহ বলেন, হাফেজা হালিমাতুস সাদিয়া লাবিবা মাত্র ৫ মাসে কুরআনে হাফেজা হয়ে কুরআনে মুজেজা দেখিয়েছেন। কুরআনে মুজেজা হলো, নবীদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া বিশেষ ক্ষমতা। মুজেজার শাব্দিক অর্থ হলো অলৌকিকতা। হযরত ইসা (আঃ) মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করে ফেলতে পারতেন। আমাদের নবী (সাঃ) এর উপর নাজিল করেছেন কুরআন৷ কুরআন এমন একটি মুজেজা যে কুরআনের একটি হরফও কিয়ামতের আগ পর্যন্ত কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। আজকে আদর্শ লিপির ৬/৭ পৃষ্টা মুখস্থ পারে এমন শিশু পাওয়া মুশকিল কিন্তু আমাদের হাফেজা হালিমাতুস সাদিয়া লাবিবা মাত্র ১০ বছর বয়সে ৫ মাসে ত্রিশ পারা কুরআন মুখস্থ করেছেন, মাশআল্লাহ। এটা আল্লাহ তা’য়ালার রহমত৷
তিনি আরো বলেন, লাবিবার ৫ মাসে কুরআনের হাফেজাকে আমি কুপি’র সাথে তুলনা করবো৷ কুপি’তে আগুন জ্বালাতে যেমন তেল লাগে তেমনি লাবিবা হাফেজা হওয়ার পেছনে তার অভিভাবকেরা সেই তেলের ভূমিকা ছিলো। তারপর হালিমা জ্বলে উঠেছিলো। এছাড়াও শিক্ষকদের ভূমিকাও ছিলো অনেক। মোটাদাগে বলতে গেলে, শিক্ষার্থীর সফল হতে হলে অভিভাবক ও শিক্ষক দু’জনেরই সমান চেষ্টা থাকতে হবে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে কুরআন পড়ে এবং পড়ায় তার মর্যাদা সর্বোত্তম। তাহলে এখন হাফেজা লাবিবার মর্যাদা সর্বোত্তম বলতে পারি আমরা। কুরআনের শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ না থাকায় আজকে আমাদেরকে বৃদ্ধ হতে বলে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষা ও কুরআনের শিক্ষা না থাকার কারণেই আজকে সমাজে এত ফেতনা ফ্যাসাদ।
শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের পাশে সমাজের পাশাপাশি সরকারেরও থাকতে হবে। অন্যান্য দেশে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের বেতন-ভাতা সরকার দিয়ে থাকে। যদিও আমাদের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের ধর্মীয় উপদেষ্টা এই বিষয়ে উদ্যোগ নিবেন বলে জানিয়েছেন। একজন ইমামের বেতন ৩০-৪০ হাজার হতে হবে। তাহলে মানুষ ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি উদ্বুদ্ধ হবে।
আর নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। এর কোনো বিকল্প নেই৷ আমাদেরকে ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে হবে অবশ্যই৷ কেউ দাঁড়িয়ে পড়তে না পারলে বসে পড়বে, আর বসে না পড়তে না পারলে শুয়ে হলেও ইশারায় নামাজ আদায় করতে হবে।
মাওলানা শাকের হোসেন শরীফ বলেন, কুমিল্লার মহিলা মাদ্রাসায় ৫ মাসে কুরআনে হাফেজা হয়েছে এটাই প্রথম। শিক্ষকের চেষ্টার পাশাপাশি অভিভাবকদেরও চেষ্টা থাকতে হবে। লাবিবা আমাকে ঈদের পরের দিনও সবক দিয়েছে। এবং কি ভোর রাতেও সবক দিতো সে। তার মধ্যেও স্পৃহার কমতি ছিলো না। সে নতুন নতুন পড়া পেলে উৎসাহী হয়ে উঠতো৷ সে এক বসায় ১৮ পৃষ্ঠার সবক দিয়েছিলো। তার বাবা মা তার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। আমরা বাচ্চাদের গায়ে হাত তুলি না। তাদেরকে আদর স্নেহের মাধ্যমে পড়া আদায় করা হয়। হাফেজা লাবিবা নিজেরও অনেক চেষ্টা ছিলো। তাকে একটু উৎসাহ দিলেই সে আরো বেশী পড়তো। এছাড়াও, শিক্ষক, অভিভাবকের প্রচেষ্টার পাশাপাশি যিনি আয়ত্ত্ব করবেন তারও চেষ্টা থাকতে হবে। পাশাপাশি আলাহ’র রহমত ও থাকে এতে। মসজিদ মাদ্রাসার কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি ট্রেনের ইঞ্জিন যদি ঠিক না থাকে তাহলে ট্রেনের বগিগুলো সামনে আগাবে না। তাই কমিটিতে যিনি থাকবেন তিনি কুরআন সুন্নাহ তে অভিজ্ঞ হতে হবে৷
দ্বীনি শিক্ষা মুসলমানের উপর ফরয। কুরআন শিক্ষা হচ্ছে ফরযে আইন। কোনো ব্যক্তি অশুদ্ধ কুরআন পড়লে তার নামাজও আদায় হবে না। তাই তাকে শুদ্ধভাবে কুরআন শিখতে হবে। মোটাদাগে বলবো, মাদ্রাসার আজমত খেদমত মোহাব্বত, শিক্ষকের খেদমত মোহাব্বত ও কুরআনের আজমত খেদমত মোহাব্বত – এই তিন গুণ থাকলেও একজন শিক্ষার্থী কুরআনে হাফেজ হতে পারবে।
হাফেজা হালিমাতুস সাদিয়া লাবিবা বলেন, আমার কুরআনে হাফেজা হতে ৫ মাস সময় লেগেছে। আমি ভবিষ্যতে বড় ‘আলেমা’ হতে চাই। ‘আলেমা’ হয়ে আমি দেশ ও দশের খিদমতে নিয়োজিত থাকতে চাই। এসময় হাফেজা হালিমাতুস সাদিয়া লাবিবা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত পাঠ করেও দর্শকদের শুনান। দর্শকরা লাবিবার প্রশংসা করেও বিভিন্ন মন্তব্য করেন। তারা হাফেজা লাবিবার সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করেন।