শুরু হয়েছে নতুন বছর। কিন্তু বছরের প্রথম দিন বরাবরের মতো এবার ঘটা করে হচ্ছে না বই উৎসব। এদিন অল্প সংখ্যক পাঠ্য বই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সকল পাঠ্য বই পেতে শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হতে পারে এক থেকে দু’মাস পর্যন্ত। বছরের মধ্যভাগে দেশের পট পরিবর্তন, কারিকুলাম পরিবর্তন, পরিমার্জন-সংযোজন নিয়ে কালক্ষেপণ, পাণ্ডুলিপি পেতে দেরির কারণে সময়মতো পাঠ্য বই পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও রয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)’র কর্মকৌশল প্রদানকারী ব্যক্তিদের অদক্ষতা, ঠুনকো কারণে দরপত্র বাতিল, বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরিতে দেরি হওয়া, পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে তদারকির কাজ দিতে কালক্ষেপণ এবং মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে গড়িমসি। এসব কারণে পাঠ্য বই ছাপানোর বিরাট এই কর্মযজ্ঞ নিয়ে বিপাকেই পড়েছে এনসিটিবি। জোর গলায় কথা বললেও আদতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তবে পাঠ্য বই হাতে না পেলেও অনলাইন ভার্সন (৪১১টি) উদ্বোধন করা হবে বছরের প্রথম দিনে। প্রতিষ্ঠানটি জানুয়ারির ৩ সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্য বই পৌঁছে দিতে চায়।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নতুন শিক্ষাক্রম কার্যত বাতিল হয়ে গেছে। পরিমার্জন করতে হয়েছে ৪৪১টি পাঠ্য বই। এগুলোর স্থানে দেয়া হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গল্প-কবিতা। এনসিটিবি’র সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির ছাপানো শেষ হলেও হয়নি ডিস্ট্রিবিউশন। এই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৯৮ লটের মধ্যে ৭১টি লটের পাঠ্য বই প্রস্তুত রয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকায় প্রায় ৩০ শতাংশ পাঠ্য বই পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ৩ সপ্তাহ। আর প্রাথমিকের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্য বই পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ৪ সপ্তাহ। দশম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের বড় একটি অংশের ছাপানোর দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তারা সময়মতো পাঠ্য বই দেয়ায় এই শিক্ষার্থীরা পাঠ্য বই পাবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই।
মাধ্যমিকের অন্যান্য শ্রেণির পাঠ্য বই পরিমার্জন ও সংযোজনে ঢের সময় লেগেছে। এমনকি ডিসেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহেও এসেছে পরিমার্জন। এসব কারণে পাণ্ডুলিপি নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হয়। মাধ্যমিকের (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) প্রায় ৩১ কোটি পাঠ্য বইয়ের মধ্যে প্রস্তুত হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৩২ লাখের মতো বই। এনসিটিবি’র আশা তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে বাকি পাঠ্য বই পৌঁছে যাবে শিক্ষার্থীদের হাতে। এনসিটিবি চাইছে বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বই প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।
এনসিটিবি জানুয়ারির প্রথম তিন সপ্তাহের কথা বললেও মুদ্রাকররা বলছেন ভিন্ন কথা। মুদ্রাকর আকাশ আহমেদ বলেন, পরিমার্জনে দেরি হওয়ার কারণে পাণ্ডুলিপি পেতে আমাদের দেরি হয়েছে। সেইসঙ্গে কাগজ সংকট, পুনরায় দরপত্র ও কার্যাদেশ দেরিতে দেয়ার কারণে আমাদের আনুষঙ্গিক কাজগুলো পিছিয়ে গেছে। এখন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্য বই পৌঁছে দিতে ফেব্রুয়ারি মাসের পুরোটা লেগে যেতে পারে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ১লা জানুয়ারি আমরা সব শ্রেণির পরিমার্জিত ৪১১টি বইয়ের সফট কপি অনলাইনে প্রকাশ করবো। ১০ই জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলার প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে চাচ্ছি, সেভাবেই কাজ চলছে। আর এ শ্রেণিগুলোর অন্যান্য সব বই চলে যাবে ২০শে জানুয়ারির মধ্যে। পরীক্ষার বিষয় থাকায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বইগুলো বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ছাপানো হয়েছে। এগুলো ৫ই জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলার শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে আশা করি।
তিনি আরও বলেন, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কিছু বই আমরা জানুয়ারির প্রথমাংশে তাদের হাতে পৌঁছে দিতে চাচ্ছি। এসব শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের বই ১০ই জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলায় পৌঁছে যাবে বলে আশা করছি।